টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে প্রায় অসম্ভব সমীকরণ মেলানো প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেদের বাকি থাকা দুই ম্যাচ জেতা। মাহমুদউল্লাহরা তো নিজেদের কাজটাই করতে পারলো না! মাত্র ৮৪ রানে অলআউট হয়ে শেষটা ব্যাটিং ইনিংসেই দেখে নিয়েছিল। আর চূড়ান্ত সমাপ্তি টেনে দিলো দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে জিতে।
আজ (মঙ্গলবার) আবুধাবিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার সুয়েলভে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়া পেসারদের সামনে দিশেহারা বাংলাদেশ ১৮.২ ওভারে অলআউট হয় মাত্র ৮৪ রানে। সহজ লক্ষ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো না হলেও হিসাব মিলিয়ে দিতে কোনও অসুবিধাই হয়নি। ৩৯ বল আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে প্রোটিয়ারা।
প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়ে আসলে শুরুতেই শেষের চিহ্ন এঁকে নিয়েছিল বাংলাদেশ। আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহরা টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামার পর কিন্তু মনে হয়নি এমন বাজে অবস্থা অপেক্ষা করছে। ২২ রানে হারায় প্রথম উইকেট, এবারের বিশ্বকাপ হিসাব করলে মন্দ নয়। কিন্তু নাঈম শেখের বিদায়ের পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে লাল-সবুজ দলের ব্যাটিং লাইনআপ। দেখতে দেখতে ৮৪ রানে অলআউট বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেললেও তাই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের কাছে আসে না। অল্প পুঁজি নিয়ে লড়াই করার মতো অবস্থানই তো বোলারদের দিতে পারেননি ব্যাটাররা। তাই তেম্বা বাভুমার ২৮ বরে ৩ চার ও ১ ছক্কায় খেলা হার না মানা ৩১ রানে সহজ জয় আসে প্রোটিয়াদের। ২২ রান করেছেন রাসি ফন ডের ডুসেন। জয় থেকে কয়েক রান দূরে থাকতে নাসুম আহমেদের শিকার তিনি। আগের ম্যাচের নায়ক ডেভিড মিলার (৫*) বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় এনে দেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। আর একটি করে উইকেট পেয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান ও নাসুম।
অল্প পুঁজি তাই বোলিংয়ে শুরুটা দারুণ হওয়া প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। সেই শুরুটা এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ডানহাতি পেসারের হাত ধরেই এসেছে প্রথম উইকেট। তার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান রিজা হেনড্রিকস।
বোলিং আক্রমণের শুরুটা করেছিলেন তাসকিন। তৃতীয় বলেই তুলেছিলেন এলবিডব্লিউয়ের আবেদন। তাতে আম্পায়ার সাড়া না দিয়েও ষষ্ঠ ওভারে ঠিকই উইকেট পেয়ে যান এই পেসার। বল সরাসরি হেনড্রিকসের পায়ে আঘাত করলে ওঠে জোরালো আবেদন। আম্পায়ারের সাড়া মিলায় বাংলাদেশ পায় প্রথম উইকেট। ফেরার আগে হেনড্রিকস ৫ বলে করেন ৪ রান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা মোটেও ভালো যাচ্ছে না কুইন্টন ডি ককের। বাংলাদেশ সেই সুযোগটা নিলো। প্রোটিয়া উইকেটকিপার ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান। পরের ওভারেই আবার উইকেট এনে দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। স্লিপে নাঈম শেখের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার এইডেন মারক্রাম।
ডি কককে বোল্ড করে ফিরিয়েছেন মেহেদী। এই স্পিনারের বলে স্টাম্প ছেড়ে খেলতে গিয়ে বিপদে পড়েন প্রোটিয়া ব্যাটার। বল আঘাত করে স্টাম্পে। ফেরার আগে ডি কক ১৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে করে যান ১৬ রান।
তার ফেরার পরের ওভরেই আবার বাংলাদেশের উইকেট উদযাপন। এবার দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফিরে যান মারক্রাম। উইকেট পেয়েছেন তাসকিন, তবে কৃতিত্ব কম পাবেন না নাঈম। স্লিপে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেখার মতো এক ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। প্যাভিলিয়নে ফেরার সময় মারক্রামের নামের পাশে কোনও রান ছিল না। ৪ বলে শূন্য রানে ফিরেছেন ডানহাতি ব্যাটার।
সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখবে কী, উল্টো ব্যাটিং ব্যর্থতার বাজে নজির স্থাপন করলো বাংলাদেশ! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস হেরে ৮৪ রানে গুটিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহরা।
বাংলাদেশি ব্যাটাররা প্রোটিয়া পেসারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি। চতুর্থ ওভারে পঞ্চম বলে হেনড্রিকসের হাতে নাঈমকে ক্যাচ বানান রাবাদা। বাঁহাতি ওপেনার ফেরেন ৯ রান করে। পরের বলে সৌম্য সরকারও সাজঘরে ফেরান প্রায় ইয়র্কার লেন্থের এক বলে। এর ফলে রাবাদার পরের ওভারে হ্যাটট্রিকেরও সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তবে দুই বল পর ঠিকই মুশফিকের উইকেট তুলে নেন প্রোটিয়া পেসার। বাড়তি বাউন্সের বলে পুরোপুরি পরাস্ত মুশফিক। গালিতে তার ব্যাটের কানায় লেগে ওঠা ক্যাচ নেন হেনড্রিকস। তাতে সৌম্যর পর মুশফিকও ফিরেছেন রানের খাতা না খুলে।
চাপ বেড়ে যাওয়ায় লিটন দাস একপ্রান্ত আগলে খেললেও বাংলাদেশ স্বস্তিতে থাকতে পারেনি। কারণ প্রোটিয়া গতিঝড়ে বাকি ব্যাটাররা যে রীতিমতো খেই হারিয়েছেন! অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ৩ রানের বেশি করতে পারেননি। আনরিখ নর্কিয়ার শর্ট লেন্থের বলে পরাস্ত হয়েছেন। বল গ্লাভসে লেগে জমা পড়ে পয়েন্টে থাকা মারক্রামের হাতে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েও রক্ষা পাননি।
আফিফ তো নেমেই রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে খেলার মাশুল দিয়েছেন। ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের সুইং করা বলে স্টাম্প উপড়ে যায় তার। আফিফ ফিরেছেন রানের খাতা না খুলেই। ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে যা একটু রান পেয়েছেন মেহদী (২৭) ও লিটন দাস (২৪)। শামীম হোসেন চেষ্টা করলেও ১১ রানের বেশি করতে পারেননি।
রাবাদা ২০ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। তবে সবচেয়ে সফল ছিলেন নর্কিয়া। ৩.২ ওভারে মাত্র ৮ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। ২১ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন শামসি।